সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট আর স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অর্থনীতিকে প্রায় নিঃস্ব করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। এরপর প্রখ্যাত অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসেই ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতির প্রাণ। হু হু করে বাড়ছে রেমিট্যান্স, দখল মুক্ত হচ্ছে ব্যাংক, মূল্যস্ফীতি কমাতেও নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় থেকেই নাজুক হতে থাকে দেশের অর্থনীতি। জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় অস্থির হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যের বাজার। ৮৬ টাকার ডলারের দাম উঠে ১২০ টাকার ওপরে। সংকট উত্তোরণে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়নি শেখ হাসিনা সরকার। বরং এর মধ্যেই চলতে থাকে বিদেশে টাকা পাচারের মহোৎসব। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাকের ডগায় চলে ব্যাংক লুট। কাগজে প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে এস আলমসহ সরকার ঘনিষ্ঠরা। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি উঠে প্রায় ৩০ শতাংশের ওপরে। বিদেশি ঋণ ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূস অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়েই নজর দেন অর্থনীতি পুনর্গঠনে। অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদকে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ড. আহসান এইচ মনসুরকে।
হাসিনা সরকারের ওপর অনাস্থা প্রকাশকারী প্রবাসী শ্রমিকরাই প্রথমে এগিয়ে আসেন নতুন সরকারের পাশে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোয় হু হু করে বাড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। সংস্থাটি তথ্যে, এক মাসে ৩৩০ কোটি ডলার রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে।
radhuni
ব্যাংকের অর্থ লুটপাট বন্ধে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ায় ইসলামিক ব্যাংকসহ প্রায় সব ব্যাংক এখন এস আলমের রাহু মুক্ত। শিগগিরই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
থাকছে না দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। এতে অনেকটাই কমবে অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনের হার। দুর্নীতি রোধে আগের চেয়ে বহুগুণ সক্রিয় দুদক। ধরা পড়েছে শেয়ার কেলেঙ্কারি আর ব্যাংকের অর্থ লোপাটের পুরাতন কারিগর সালমান এফ রহমান। অন্যরাও গোয়েন্দা নজরদারিতে।
দেশের মানুষকে হাঁসফাঁস অবস্থাতে রেখে অর্থনীতির রঙিন চিত্র এঁকে গেছেন শেখ হাসিনা সরকার। আসলেই অর্থর্নীতির অবস্থা কেমন, তা জানতে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৮০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে বলে কথা রয়েছে। যার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের নতুন অর্থনীতির ভীত গড়বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পাঠকের মতামত